fbpx
কেন কেউ কালো, কেউ সাদা?

কেন কেউ কালো, কেউ সাদা? Leave a comment

এ মা, এত কালো হলে কী করে? এমন মন্তব্য অনেককেই শুনতে হয়। ছোটবেলার লাল টুকটুকে ফরসা গায়ের রং বড় হতে হতে কুচকুচে হয়ে যায়। হ্যাঁ, মানুষের গায়ের রং বদলায় বটে। আদতে চামড়ার নিচে সবার রক্ত লাল হলেও বংশগতি, জলবায়ুর প্রভাব, জাতিগত সত্তার কারণে আমাদের গায়ের রং আলাদা আলাদা। কিন্তু কখনো কখনো নানা রোগ-বালাই, বিশেষ করে হরমোনের প্রভাবে গায়ের রঙে পরিবর্তন হতে পারে। রং পাল্টাতে পারে নানা ওষুধপত্রের প্রভাবেও। আসুন জেনে নিই সে রকম কয়েকটি সমস্যার কথা।

কেন কেউ কালো, কেউ সাদা?

আমাদের ত্বকে রয়েছে মেলানোসাইট নামের বিশেষ কোষ, যারা তৈরি করে মেলানিন নামের রঞ্জক পদার্থ। এই মেলানিনই ঠিক করে কার গায়ের রং কেমন হবে। মেলানিনের মাত্রা আবার নির্ভর করে জাতিসত্তা, বংশগতি, সূর্যালোকের উপস্থিতির ওপর। মেলানিন তৈরি বেড়ে গেলে ত্বকের রং গাঢ় বা কালো হয়ে যায়, যেমনটা ঘটে রোদে পুড়লে, আবার মেলানিন অস্বাভাবিক কমে গেলে রং ফ্যাকাশে সাদা হয়ে যাবে, যেমন শ্বেতী রোগে। এই মেলানিনকে প্রভাবিত করে দেহের কিছু হরমোনও।

রং বদল- নানা কারণ
রং কালো হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো রোদে পোড়া। ত্বককে রোদের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচানোর জন্য মেলানোসাইট মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, ফলে ত্বক কালো হয়ে যায়। ছোটবেলার ফরসা রং তাই বড় হতে হতে রোদে পুড়ে বাইরে ঘুরে ধীরে ধীরে কালচে হয়ে যায়। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির অকার্যকারিতায় ধীরে ধীরে ত্বক, ত্বকের ভাঁজ, সন্ধির ওপর ও অনাবৃত স্থান কালো হয়ে যায়। একে বলে অ্যাডিসনস ডিজিজ। গর্ভকালীন হরমোনের প্রভাবে মুখে ও অন্যান্য স্থানে কালচে বর্ণ ধরে, একে বলে মেলাসমা। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলেও এমন হতে পারে। এ ছাড়া কেমোথেরাপি দিলে বা মিনোসাইক্লিন জাতীয় ওষুধের প্রভাবেও গায়ের রং কালো হয়ে যেতে পারে। লিভার সিরোসিস বা যকৃতের দীর্ঘমেয়াদি রোগে গায়ের রং কাদার মতো বর্ণ ধারণ করতে পারে। রক্তে লৌহ জমে যায় হিমোক্রোমাটোসিস নামের জেনেটিক জটিলতায়, যাতে লৌহ বিপাক মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এই রোগে লৌহ জমে গিয়ে দেহের রং তামার মতো হয়ে যায়, সঙ্গে ডায়াবেটিসও হয় বলে এর অপর নাম ব্রোনজ ডায়াবেটিস। স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিট্যান্সের কারণে দেহের ভাঁজে ভাঁজে, যেমন বগলে, ঘাড়ের ত্বক ঘোর কালো বর্ণ নেয়, একে বলে অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকেনস। নানা রকমের ক্যানসারের কারণে দেহের ত্বকের রং পরিবর্তিত হতে পারে। থাইরয়েড হরমোনের অভাবে গায়ের রং হলদে ফ্যাকাশে দেখায়। আর জন্ডিসে তো হলুদ দেখায়ই।

দুশ্চিন্তা নয়
গায়ের প্রকৃত রং আসলে ঠিক করে দেয় আপনার ত্বকের মেলানিনের মাত্রা, যা আগেই বলেছি অনেক কিছুর ওপরই নির্ভর করে। তাই গায়ের রং উজ্জ্বল বা ফরসা করার নানা চেষ্টা আসলে অত উপকার বয়ে আনে না। তবে রোদে পোড়া প্রতিরোধ করার জন্য আপনি রোদচশমা, ছাতা ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। হঠাৎ করে রঙের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তা নয়তো গায়ের রং নিয়ে বেশি চিন্তিত হওয়ার আসলে কিছু নেই।

কিভাবে ত্বকে মেলামিনের ব্যালেন্স ঠিক রাখবেন?

মেলামিন কমানোর কোন  ব্যবস্থা নেই। তবে আপনি আপনার ত্বকের মেলামিন নিয়ন্ত্রন রাখতে পারেন ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নেয়ার মাধ্যমে।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বককে সুস্থ রেখে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানো যায়।এর জন্য আপনাকে নিয়মিত ত্বক এবং মাথার ত্বকের যত্ন নিতে হবে। প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমান। ৮ গ্লাস করে পানি পান করুন। মাথার ত্বক এবং ত্বক দুইই পরিষ্কার রাখুন। সপ্তাহে একদিন আপনার বিছানা চাদর, বালিশের কভার, চিরুনি, তোয়ালে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিবেন। আলাদা তোয়ালে ব্যবহার করবেন। দিনে কমপক্ষে দুবার শুধু পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। দিনে অন্তত একবার ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করবেন। আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেইসওয়াশ ব্যবহার করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তা দূর করার জন্য কাজ করুন। পেট পরিষ্কার না থাকলেও ত্বক অনুজ্জ্বল দেখায়। শারীরিক পরিশ্রম করুন,এতে ত্বকে অক্সিজেন এর সরবরাহ বাড়বে। এর ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে দুধ ১/২ চা চামচ + লেবুর রস ১/২ চা চামচ+ আটা ১ চা চামচ + হলুদ ১চিমটি নিয়ে মিশ্রণটি ১৫ মিনিট মুখে রাখবেন। এরপর মুখ ধুয়ে ফেলবেন। তবে, মুখে লাগানোর আগে দেখে নিবেন হলুদ এবং লেবুর রসে আপনার ত্বকে সংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জি আছে কিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =